তামার আকরিকগুলি লেখ। তামার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বা ব্যবহার লেখ। তামার বিশ্ব বন্টন লেখ। ভারতের তামা উত্তোলক অঞ্চলগুলি কী কী?

তামার আকরিকগুলি, তামার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বা ব্যবহার, তামার বিশ্ব বন্টন, ভারতের তামা উত্তোলক অঞ্চলগুলি এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

তামার আকরিক:

তামার আকরিক মূলত সাত প্রকারের হয়। যথা –

  1. চ্যালকোসাইট – এতে 79.8 % তামা রয়েছে।
  2. কোভেলাইট – এতে 66.4% তামা রয়েছে।
  3. বোরনাইট – এতে 63.3% তামা রয়েছে।
  4. ম্যালাকাইট – এতে 57.3% তামা রয়েছে।
  5. অ্যাজুরাইট – এতে 51.1% তামা রয়েছে।
  6. ক্রাইসোকোলা – এতে 36.0% তামা রয়েছে।
  7. চ্যালকোপাইরাইট – এতে 34.5 % তামা রয়েছে।

তামার ব্যবহার:

বর্তমান দিনে লৌহ ইস্পাতের পাশাপাশি তামার ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারগুলি হল –

1. বৈদ্যুতিক শিল্পে:

আধুনিক সভ্যতায় বিদ্যুৎ এক অপরিহার্য উপাদান। তামার ব্যবহার বিভিন্ন শিল্পে হলেও বৈদ্যুতিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে এর ব্যবহার একচেটিয়া। তামা বিদ্যুতের সুপরিবাহী বলে এই শিল্পে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। তামার তার তৈরি, বৈদ্যুতিক মোটর, পাখা, জেনারেটর, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, টেলিভিশন, রেডিও, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কুলার প্রভৃতি তৈরিতে প্রচুর পরিমাণে তামা লাগে।

2. যানবাহন নির্মাণ শিল্পে:

বিভিন্ন প্রকার যানবাহন। যেমন – মোটরগাড়ি, জাহাজ, বিমান প্রভৃতি নির্মাণে তামা ব্যবহার করা হয়।

3. সংকর বা মিশ্র ধাতু উৎপাদনে:

তামার সঙ্গে অন্য ধাতু মিশিয়ে সংকর ধাতু প্রস্তুত করা হয়। যেমন –

  • তামা + টিন(রাং) = ব্রোঞ্জ
  • তামা + টিন + দস্তা = কাঁসা
  • তামা + টিন = গিনি সোনা
  • তামা + নিকেল + দস্তা = জার্মান সিলভার

4. গৃহস্থালির সামগ্রী প্রস্তুত করতে:

পূজা অর্চনায় তামার তৈরি বহু বাসনপত্র ব্যবহার করা হয়। এছাড়া গৃহস্থের অন্যান্য কাজেও তোমার বাসনপত্র ব্যবহার করা হয়।

5. অন্যান্য:

এছাড়া রাসায়নিক শিল্পে, রং প্রস্তুতিতে, সমরাস্ত্র উৎপাদনে, সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি নির্মাণে তামা ব্যবহার করা হয়।

তামার বিশ্ব বন্টন:

1. চিলি:

তামা উত্তোলনে চিলি পৃথিবীতে প্রথম স্থান অধিকার করে। আন্দিজ পর্বত জুড়ে চিনির তামার খনি গুলি অবস্থিত। এগুলি হল –

  • চুকুইকামাটা(বিশ্বের সবচেয়ে বড় তামার খনি),
  • পেট্রোরিলোস,
  • এল তেনিয়েন্তি,
  • ব্যাডেন,
  • এল সালভাডর,
  • এল মেরো প্রভৃতি।

2. চীন:

তামা উত্তোলনে চীনের স্থান পৃথিবীতে দ্বিতীয়। চীনের মাঞ্চুরিয়া ও ইউনিয়ন প্রদেশে তামার খনি গুলি অবস্থিত। এছাড়া অন্যান্য খনি গুলি হল হুকুম, ইয়ং পিং মাগুয়ন ইত্যাদি।

3. পেরু:

তামা উত্তোলনে পেরু বিশ্বের তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এখানকার তামা খুনি গুলি হল –

  • সেরে দ্য প্যাসকো,
  • ক্যাসাপাল্কা,
  • মোরোকোচা,
  • কাজামার্কা,
  • টোকুইপালা,
  • কুয়াজোন প্রভৃতি।

4. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র:

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম আকরিক তামা উত্তোলক দেশ হলো আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। এদের প্রধান প্রধান তামার খনি গুলি হল –

  • অ্যারিজোনা প্রদেশের গ্লোব, মায়ামি, জেরেমা প্রভৃতি।
  • উটা প্রদেশের বিংহাম(এটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম খনি),
  • মন্টানা প্রদেশের বিউট,
  • মিচিগান প্রদেশ,
  • নেভেদা,
  • নিউ মেক্সিকো।

5. কঙ্গো প্রজাতন্ত্র:

কঙ্গো প্রজাতন্ত্র তামা উত্তোলনে বিশ্বে পঞ্চম স্থান অধিকার করে। এখানকার প্রধান খনি গুলি হল –

  • কাটাঙ্গ,
  • কিপুই,
  • মুকোন্ডো,
  • ডিবুলুসি,
  • মাসাম্বা প্রভৃতি।

6. অস্ট্রেলিয়া:

তমা উত্তোলনে পৃথিবীতে অস্ট্রেলিয়ার স্থান ষষ্ঠ। এদেশের প্রধান খনি গুলি হল –

  • নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশের ব্রোকেনহিল,
  • কুইন্সল্যান্ড প্রদেশের কার্পেন্টারিয়া, মাউন্ট ইসা ও মাউন্ট মর্গ্যান,
  • দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া প্রদেশের কিছু প্রদেশ।

এছাড়া রাশিয়া, জাম্বিয়া, কানাডা, মেক্সিকো, ভারত প্রভৃতি দেশে তামা উত্তোলন করা হয়।

ভারতের তামা উত্তোলক অঞ্চল:

ভারতে সামান্য পরিমাণ তামা পাওয়া যায় যা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। ভারতের তামা উত্তোলক অঞ্চল গুলি হল –

  1. মধ্যপ্রদেশের মালঞ্চখন্ড, জব্বলপুরজেলা।
  2. রাজস্থানের ক্ষেত্রী(ভারতের বৃহত্তম), দরিবা, প্রতাপগড়।
  3. ঝাড়খণ্ডের রাকা, মোসাবনি, রামচন্দ্র পাহাড়, ধোবানি, পাথরগোড়া, তামা পাহাড় প্রভৃতি।
  4. সিকিমের রংপো, সিসনি, ডিক্কু।
  5. অন্ধ্রপ্রদেশের অগ্নিগুণ্ডলা, ময়লারাম, নাল্লাকোন্ডা।
  6. কর্নাটকের চিত্রদুর্গ, গুলবার্গ, হাসান।

FAQ/ বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী

তামা কোন কোন শিলায় পাওয়া যায়?

তামা সাধারণত আগ্নেয় শিলা ও রূপান্তরিত শিলার মধ্যে পাওয়া যায়।

তামার প্রকৃতি ও রং কী?

তামা সাধারণত নমনীয় প্রকৃতির হয় এবং বাদামি রঙের হয়।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!