গ্ৰিনহাউস এফেক্ট – বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী” – ভৌগোলিক কারণ এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ভূমিকা:
গ্রীন হাউজ কথার অর্থ ‘সবুজ ঘর’। সাধারণত শীত প্রধান দেশে শাকসবজি ও চারা গাছ বৃদ্ধির জন্য কাজের ঘর ব্যবহার করা হয়। ক্ষুদ্র তরঙ্গে আগত সূর্য রশ্মি গাছের ভিতরের ঢুকতে পারে কিন্তু দীর্ঘ তরঙ্গের সেই রসিয়ার বেরোতে পারে না ফলে ঘরটির উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে গাছের জীবন প্রবাহকে অঘন্ন রাখে এই ধরনের গাছের ঘরকে গ্রীন হাউজ বলে।
ভৌগলিক কারণ:
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলও গ্রিন হাউজের মতোই কাজ করে, পৃথিবীতে ক্ষুদ্র তরঙ্গের মাধ্যমে সূর্যরশ্মি এবং তাপের আগমন ঘটে এবং ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে দীর্ঘ তরঙ্গ রূপে ফিরে যায়। উল্লেখ্য যে ওই দীর্ঘ তরঙ্গের রশ্মি বায়ুমণ্ডলের CO2, CFC, CH4, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা প্রভৃতি দ্বারা শোষিত হয়ে বায়ুমণ্ডল কে উত্তপ্ত করে। এর ফলে বেশি পরিমাণ উত্তাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। এই ঘটনাকে বলা হয় গ্রিন হাউস এফেক্ট।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী 1800-1900 সালের মধ্যে 1°C এবং 1900-200 সালের মধ্যে 2°C উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন প্রকার বায়ু দূষণকারী পদার্থ যেমন – কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মোনো অক্সাইড, ক্লোরো ফ্লুরো কার্বন, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি এর প্রভাবে পৃথিবী তথা বায়ুমণ্ডলের ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধি কে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা Global Warming বলে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব:
গ্রিন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধির প্রধান ও একমাত্র ফল হল পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি। এরূপ উষ্ণতা পরিবর্তনের জন্য পরিবেশের উপর এক সুদূর প্রসারী প্রভাব দেখা যায়। যথা –
গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তন:
বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের সঞ্চয় বিশেষ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সঞ্চয় যদি আরো বাড়ে তাহলে গড় উষ্ণতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।10 থেকে 15 বছর পর পৃথিবীর গড় উষ্ণতা এমন এক চরমসীমা ছাড়িয়ে যাবে যখন সামগ্রিক জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সাথে আরো অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটবে। যেমন মানুষ বাস্তহারা হয়ে বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের জন্য অন্যত্র পাড়ি দেবে ফলে খাদ্যাভাব বাড়বে।
ঝড়ের প্রকোপ বৃদ্ধি:
সমুদ্র জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হেরিকেন ও টর্নেটের মতো ঝড়ের বৃদ্ধি পাবে।
খরা প্রবণতার বৃদ্ধি:
গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাবে উষ্ণতর আবহাওয়া আরো উষ্ণতর হওয়ার ফলে মৃত্তিকা শুষ্ক হয়ে পড়বে এবং ব্যাপক অঞ্চল খারাপ প্রবল হয়ে পড়বে রুটির ঝুড়ি নামে পরিচিত ইউক্রেন মরুভূমিতে পরিণত হবে।
ভৌম জল হ্রাস:
বাষ্পীভবন বেড়ে যাওয়ায় ভ্রম জলের হ্রাস ঘটবে।
অরণ্য হ্রাস:
বনভূমি হ্রাস পাবে এবং উষ্ণতা বাড়ার ফলে উদ্ভিদের প্রকৃতি পরিবর্তন হবে।
প্রাণীর বিলুপ্তি ও প্রবর্জন:
কিছু জীবকুল উষ্ণতা সহ্য করতে না পারায় তাদের বিলুপ্তি হবে অথবা সম্ভব হলে কম উষ্ণ অঞ্চলে চলে যাবে।
বরফ গলন:
মেরু অঞ্চলে বা পর্বত শীর্ষে জমাট বাধা তুষার অতিরিক্ত উষ্ণতার ফলে গলতে শুরু করবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের জলতল বৃদ্ধি:
জলবৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ উপরের উঠে আসায় উপকূলবর্তী অঞ্চল ও দ্বীপগুলি প্লাবিত হয়।
সমুদ্রে বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি:
সমুদ্রের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি হয়। প্লাংটনসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী ধ্বংস ও বিপন্ন হবে।
ধোঁয়াশা কাকে বলে?
কুয়াশা এবং ধোঁয়া মিশে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। মূলত বড় শহর গুলিতে বায়ুতে প্রচুর ধোঁয়া, কার্বনকনা এবং নানাবিধ পদার্থ থাকে। ওই সব পদার্থ গুলি জলাকর্ষী পদার্থ হিসেবে কাজ করে। ভোরবেলায় কুয়াশা এসব দূষিত ও কার্বন আশ্রিত ধোঁয়াকে আশ্রয় করে আরো গভীর ও ঘন হয়ে ওঠে। এই ধোঁয়াশার মধ্যে যেহেতু শিল্প কারখানার দূষিত পদার্থ মিশে থাকে তাই এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকারক।
তুহিন কাকে বলে?
বায়ু যখন শিশিরাঙ্কে পৌঁছায় তখন বায়ুর জলীয় বাষ্প জনকনায় পরিণত হয়। কিন্তু ওই বায়ুর উষ্ণতা হিমাঙ্কের নিচে নামলে জনকণা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বরফ কণায় পরিণত হয়, এইসব বরফ কণাকে তুহিন বলে।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:20.