ভূমিধস কাকে বলে, ভূমিধসের কারণগুলি লেখ এবং ভূমিধস সংক্রান্ত বিপর্যয়ের মোকাবিলায় জন্য কী ব্যবস্থাপনা বা পরিকল্পনা নেওয়া হয় এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ভূমিধস:
ভূমির ঢাল বরাবর অভিকর্ষজ টানে শিলাস্তূপ, শিলাচূর্ণ, মাটি এবং অন্যান্য আলগা পদার্থের হঠাৎ নীচের দিকে নেমে আসাকে ভূমিধস বা Landslide বলে। সাধারণত বর্ষাকালে পাহাড়ে ধস নামার প্রবণতা বেশি থাকে।
ভূমিধসের কারণ:
ভূমিধসের উৎপত্তি বা ধস নামার কারণগুলিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
প্রাকৃতিক কারণ:
1. অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে:
পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে, যাবনা, মাটির পাথর জলে ভিজে আলগা ও ভারী হয়ে যায় তখন মাধ্যাকর্ষণের টানে নীচের দিকে খসে পড়ে।
2. দুর্বল শিলা:
পাহাড়ি অঞ্চলে বহুদিন ধরে জল, হাওয়া, সূর্যতাপ, গাছের শিকড়ের চাপ, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়া প্রভৃতি কারণে শিলা ফেটে যায়, দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে দুর্বল পদার্থের স্তূপ ভূমিধস হয়ে নীচে নামতে থাকে।
3. মাটিতে অত্যাধিক বালির উপস্থিতি:
যে মাটিতে বালির ভাগ বেশি সেই মাটিতে সহজেই জল ঢুকে যেতে পারে ফলে মাটি ভারী হয়ে ভূমিধস তৈরি করে।
4. অগ্নুৎপাত ও ভূআলোড়নের ফলে:
ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বেরিয়ে আসায় মাটি মুহুর্মুহু কাঁপতে থাকে ফলে ধস নামে।
5. অভিকর্ষজ বল:
ভূপৃষ্ঠের উপরে বা নিকটে অবস্থিত প্রতিটি বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বলকে অভিকর্ষজ বলে। অভিকর্ষজ বলের মান ঢালের উপরিস্থিত পদার্থের ও জলের উপর নির্ভরশীল। পদার্থের ওজন বেশি হলে ভূমিধসের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
মনুষ্যসৃষ্ট কারণ:
1. অনাবৃত ভূভাগ:
বন কেটে সাফ করে ফেললে মাটির উপরে তখন গাছপালার আবরণ থাকে না, এই অবস্থায় বৃষ্টির জল দিনের পর দিন মাটিকে সরাসরি আঘাত করে, মাটির মধ্যে প্রচুর জল ঢুকে যায়। ফলে মাটি দুর্বল হয় এবং ধস নামে।
2. দুর্বল পাহাড়ি ঢাল:
দুর্বল ও খাড়াই পাহাড়ি ঢালে নিয়ম না মেনে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট বানালে, দুর্বল মাটিতে বড়ো বড়ো গাছ পুতলে, শহরের জঞ্জাল অনেক দিন ধরে পাহাড়ের ঢেলে জমা করা হলে ধস নামে।
ধসের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয়:
- পার্বত্য অঞ্চলে ধস নামের ফলে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
- ধসের ফলে পর্বতের পাদদেশের বাড়িঘর ভেঙ্গে যায়।
- পার্বত্য ঢালের গাছপালা মাটিতে মিশে যায়।
- নদীর বুকে ধসজনিত পদার্থ জমলে নদীর গভীরতা হ্রাস পায় এবং বর্ষাকালে বন্যার সৃষ্টি হয়।
- ধস নেমে পার্বত্য অঞ্চলের রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম ক্ষতি হয়।
ভূমিধস সংক্রান্ত বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য ব্যবস্থাপনা:
গঠনমূলক ব্যবস্থাপনা:
- পাহাড়ে ধস প্রবন এলাকা গুলিতে পর্যাপ্ত বাঁধ দেওয়া।
- ভূমিধসের প্রধান কারণ মাটির জল সম্পৃক্ততা। তাই ঢালে জল অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এমনকি পাহাড়ে ঢালের যেখানে বাদ দেওয়া আছে সেখানে জল নিষ্কাশন এর ব্যবস্থা করতে হবে।
- পাহাড়ি ঢালে যথাসম্ভব বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
- নদীখাতের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে যাতে জল প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত না হয়।
অগঠনমূলক ব্যবস্থাপনা:
- ধস প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ম্যাপ তৈরি করতে হবে।
- ভূমির সঠিক ব্যবহার ও ঢালে উপযুক্ত কৃষি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- অধিক পশুচারণ, ঝুমচাষ বন্ধ করতে হবে।
- ধসপ্রবণ এলাকায় বহুতল নির্মাণ বন্ধ করতে হবে এবং গৃহ নির্মাণ করতে হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
- ভূমিধস সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে।