ভারতের গ্রামাঞ্চলে জমি ব্যবহারের বৈশিষ্ট্য এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:
গ্রাম সাধারণত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল জনবসতি। খাদ্যশস্য উৎপাদন, মাছ ধরা, পশুপালন, বনজ সম্পদ আহরণ প্রভৃতি কাজকর্মকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ বসতির উদ্ভব হয়। গ্রামাঞ্চলে জমির ব্যবহারগত কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল –
1. কৃষিজমির প্রাপ্যতা:
গ্রামের অধিকাংশ জমি কৃষি ও সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহৃত হয়। অবস্থান অনুসারে গ্রামগুলি কৃষিজমীর মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।
2. জলের উৎস হিসেবে পুকুর, নদী, ঝরনা প্রকৃতি:
পানীয় জল, চাষাবাদ, মাছ ধরা, এমনকি দৈনন্দিন অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য জল একান্ত প্রয়োজন। এই কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রামগুলি নদী, হ্রদ, পুকুর, দিঘী, অন্যান্য জলাশয়, খাল, ঝরনা প্রভৃতির ধারে অবস্থিত হয়।
3. উদ্ভিদের আবরণ:
গ্রামাঞ্চলের কৃষিজমির আল বরাবর কৃষি বনায়নের মাধ্যমে, জলাশয়ের ধারে ও ফাঁকা জমিতে সামাজিক বনসৃজন প্রক্রিয়ায় গাছপালা লাগিয়ে সবুজের আয়োজন ঘটানো হয়। এছাড়া বর্তমানে কাঠ, বাঁশের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলার জন্য গ্রামাঞ্চলের বহু লোক আয়ের জন্য জমিতে বাঁশ, কদম, ইউক্যালিপটাস প্রভৃতি গাছের চাষ করেন। পরিবারের আর্থিক সুরক্ষার কথা ভেবে অনেকে সেগুন, শাল প্রভৃতি গাছ লাগিয়ে থাকে।
4. পথঘাটের অনুন্নত অবস্থা:
গ্রামীণ বসতি এলাকায় জমির আল বরাবর পায়ে চলা পথের সংখ্যা বেশি হয়। পাকা বাঁধানো রাস্তার সংখ্যা, দৈর্ঘ্য গ্রামাঞ্চলে নিতান্তই কম। তবে বর্তমানে অনেক গ্ৰামের মধ্যে দিয়ে পাকা সড়ক গড়ে তোলা হয়েছে।
5. দৈনিক বাজারের অনুপস্থিতি:
গ্রামীণ বসতি এলাকায় সাধারণত দৈনিক বাজার বসে না।সকাল বিকেল রোজ বাজার বসানো নগর ও শহরের বৈশিষ্ট্য। গ্রামে সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে হাট বসে, তাই বাজারের জন্য অনেক ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের নির্দিষ্ট জমির ব্যবহার দেখা যায় না।
6. ছড়ানো ছিটানো বসতবাড়ি, শস্য মজুত করার গোলা:
বড় বাস্তু জমি থাকা গ্রামীন জমি ব্যবহারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।কৃষিভিত্তিক গ্রামগুলিতে গোয়ালঘর, ধান গম রাখার গোলাবাড়ি, ধান গম শুকনো করার ঘর সংলগ্ন ফাঁকা জমি শোবার ঘর, রান্নাঘর, প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয়।
7. সামাজিক ও ধর্মীয় কাজের জন্য জমির ব্যবহার:
মন্দির, মসজিদ, গির্জা, কবরখানা, চন্ডীমন্ডপ প্রভৃতি নানান ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে ব্যবহারের জন্য গ্রামের জমি নির্দিষ্ট করা হয়।
✓ ভূমি ব্যবহারের প্রকারভেদ:
গ্রামাঞ্চলে ও শহরাঞ্চলে ভূমি ব্যবহারের ধরন এক নয় তবে সাধারণভাবে এই উভয় অঞ্চলে এই ভূমি ব্যবহারকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
1. বসবাসক্ষেত্র বা আবাসস্থল:
কুঁড়েঘর থেকে পাকা বাড়ি সব ধরনের বাসগৃহ নির্মাণ।
2. পরিবহন ও যোগাযোগ:
সড়কপথ, রেলপথ ও বিমানবন্দর প্রভৃতি।
3. জীবিকার উৎস ক্ষেত্র:
কৃষিক্ষেত্র, ফলের বাগান, বনজ সম্পদ তৈরি ও সংগ্রহক্ষেত্র, খনিজ সম্পদ আহরণক্ষেত্র, শিল্পতালুক ও বাণিজ্যস্থান, জলসম্পদ ক্ষেত্র ইত্যাদি।
4. সাংস্কৃতিক ও বিনোদন ক্ষেত্র:
বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান, যেমন – শিক্ষাক্ষেত্রে, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্যাংক-বীমা, অফিস, আদালত ইত্যাদি। এছাড়া শহর স্থাপন, উদ্যান, পার্ক, খেলার মাঠ, মেলা প্রাঙ্গণ, স্মৃতিসৌধ, ধর্মীয়স্থান ইত্যাদি।
This post was updated on 2023-02-22 17:56:51.