খনিজ তেলের শ্রেণীবিভাগ, উপজাত সামগ্ৰী এবং ব্যবহার লেখ।

খনিজ তেলের শ্রেণীবিভাগ, উপজাত সামগ্ৰী এবং ব্যবহার এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

খনিজ তেলের শ্রেণীবিভাগ:

রং, রাসায়নিক গঠন, ঘনত্ব ইত্যাদি অনুসারে খনিজ তেলকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

1. প্যারাফিন মিশ্রিত খনিজ তেল:

মোম,পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, পিচ্ছিলকারক তেল ইত্যাদি উপজাত দ্রব্য উৎপাদনে উপযোগী, এই তেল অতি উৎকৃষ্ট মানের। এর রং সবুজ থেকে বাদামি হয়।

2. অ্যাসফল্ট মিশ্রিত খনিজ তেল:

বিটুমেনটার বা পিচ বা অ্যাসফল্ট মিশ্রিত তেল আঠালো, চটচটে এবং কালো রঙের হয়। এই জাতীয় তেল থেকে পিচ, ন্যাপথা ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয়।

3. মিশ্র ভিত্তিক খনিজ তেল:

প্রায় আধাআধি পরিমাণ প্যারাফিন ও ন্যাপথলিন বা অ্যাসফল্ট মিশ্রিত। এই তেল থেকেও জ্বালানি ও নানা উপজাত সামগ্ৰী উৎপাদন করা হয়।

খনিজতেলের উপজাত সামগ্ৰী:

খনিজতেল 83-87% কার্বন বা অঙ্গার এবং 11-14% হাইড্রোজেনের রাসায়নিক যৌগ। খনিজ তেলকে শোধন বা পরিশ্রুত করে নানা ধরনের তরল, কঠিন ও গ্যাসীয় উপজাত সামগ্ৰী পাওয়া যায়।

যেমন – মোটরগাড়িতে ব্যবহারের উপযোগী গ্যাসোলিন, বিমানে ব্যবহারের জন্য অ্যাভিয়েশন গ্যাসোলিন, পেট্রোলিয়াম ইথার – যা বিভিন্ন ধরনের তেল ও পিচ্ছিলকারক দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়; সাদা স্পিরিট, ন্যাপথা, কেরোসিন, লুব্রিকেটং তেল, ভেজলিন, গ্ৰিজ, ডিজেল, প্যারাফিন, পেট্রোলিয়াম ওয়াক্স – এটি ধাতুর অবক্ষয় রোধে করার কাজে ব্যবহৃত হয়; অ্যাসফল্ট বিটুমেন, প্যারাফিন মোম(পালিশ, মোমবাতি, মোমকাগজ প্রভৃতি তৈরির জন্য দরকার); পলিথিন, পলিভিনাইল, ক্লোরাইড, প্লাস্টিক, কৃত্রিম রবার উৎপাদনের জন্য বিউটেন থেকে সংগৃহীত বিউটাডিন।

খনিজ তেলের ব্যবহার:

খনিজ তেল আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার প্রধান ভিত্তি, পৃথিবীতে খনিজ তেল বহু উদ্দেশ্য সাধক সম্পদ হিসেবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে ব্যবহৃত হয়। নীচে আলোচনা করা হল –

1. পরিবহন ক্ষেত্রে:

রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি, ট্রাক, বাস, বিমান ইত্যাদির প্রধান চালিকা শক্তি খনিজ তেলের বিভিন্ন পরিশোধিত সামগ্ৰী। যেমন – গ্যাসোলিন, পেট্রোল, ডিজেল, অ্যাভিয়েশন গ্যাসোলিন, হাইস্পিড ওয়েল প্রভৃতি।

2. সামরিক বা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে:

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কামানবাহী শকট, ট্যাংক, যুদ্ধ বিমান ইত্যাদি চালাতে পেট্রোল, ডিজেল এবং যুদ্ধের নানা অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরিতে খনিজ তেল ব্যবহৃত হয়।

3. কৃষিক্ষেত্রে:

নাইট্রোজেন সার ও কীটনাশক দ্রব্য হল খনিজ তেলের উপজাত সামগ্ৰী। এছাড়া ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, পাম্প সেট, জেনারেটর প্রভৃতি যন্ত্রপাতি চালাতে পেট্রোল ও ডিজেল ব্যবহৃত হয়।

4. তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন:

ডিজেল পুড়িয়ে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যেমন – অসমের ডিগবয়। এছাড়া জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ডিজেল, কেরোসিন ব্যবহৃত হয়।

5. রাসায়নিক শিল্পে:

পেট্রো রসায়ন শিল্প খনিজ তেল ছাড়া অচল। তৈল শোধনাগারে পাতন পদ্ধতির মাধ্যমে যে সমস্ত তরল, কঠিন ও গ্যাসীয় উপজাত দ্রব্য সংগ্ৰহ করা হয়, সেগুলি পুনরায় শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

6. গৃহস্থালিতে:

ভারতের যেসব গ্ৰামে এখনোও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সেখানে ল্যাম্প, হ্যারিকেন জ্বালানোর জন্য ও রান্নার স্টোভে কেরোসিন ব্যবহৃত হয়।

7. পিচ্ছিলকারক পদার্থ তৈরিতে:

খনিজ তেল থেকে মোবিল, গ্ৰিজ প্রভৃতি পিচ্ছিলকারক পদার্থ তৈরি করা হয়, যেগুলি বিভিন্ন যন্ত্রপাতিকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।

8. অন্যান্য:

এছাড়া খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্য পিচ রাস্তা তৈরিতে, প্যারাফিন মোম তৈরিতে, অ্যাসফল্ট জল নিরোধক বস্তু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

Leave a Comment

error: Content is protected !!