প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও উপায়গুলি লেখ।

প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও উপায়গুলি এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলো তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা:

প্রকৃতির যে উপাদানগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয় সেগুলি আমাদের কাছে প্রাকৃতিক সম্পদ রূপে গণ্য হয়।

নিজের সম্পদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

মানব সমাজের চাহিদা পূরণ:

মানব সমাজে প্রাকৃতিক সম্পদের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। জ্বালানি হিসেবে পেট্রোল ডিজেল বিভিন্ন শিল্পের উপাদান হিসেবে লোহা জীবনের বহু ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামগ্রী নির্মাণের জন্য কাঠের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। অপরিকল্পিতভাবে এই সম্পদ গুলির বিনাশ ও ভোগ সাধন চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মানব সমাজের চাহিদা মেটাতে এই সম্পদ গুলি আর পাওয়া যাবে না। তাই সম্পদ সংরক্ষণ দরকার।

বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা:

প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানুষ উভয়েই বাস্তুতন্ত্রের অংশ। উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর মতো প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ গুলি যদি ক্রমাগত ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে থাকে তাহলে পৃথিবীর বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে যার ফলে পৃথিবী মনুষ্য বাসার অনুপযোগী হবে। তাই প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ প্রয়োজন।

দূষণ বৃদ্ধি:

প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যাকে ক্রমশ বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ তাপবিদ্যুৎ তৈরিতে ব্যাপক হারে কয়লার ব্যবহার, জ্বালানি রূপে যানবাহনে পেট্রোল-ডিজেলের ব্যবহার বায়ুদূষণ, তাপ দূষণের সৃষ্টি করেছে। এর সুদূর প্রসারী ফল হিসেবে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুর অবনতি, জীবকূলের স্বাস্থ্যহানি প্রভৃতি ঘটে। প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ তাই একান্ত প্রয়োজন।

জীবের অস্তিত্ব রক্ষা:

পৃথিবী যদি বৃক্ষশূন্য হয়ে যায় তাহলে জীবের শ্বাসের জন্য একান্ত অপ্রয়োজনীয় অক্সিজেনের উৎস নষ্ট হয়ে যাবে।খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাবে মানব সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জীবজন্তুর অতিরিক্ত হত্যার ফলে পরিবেশের সৌন্দর্য ও ভারসাম্য নষ্ট হবে। এভাবে মানব সমাজও আস্তে আস্তে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। তাই প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ দরকার।

পৃথিবীর বাসযোগ্যতা অখুন্ন রাখা:

কয়লা, ম্যাঙ্গানিজ, খনিজ তেলের মতো সম্পদগুলি ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে শেষ হয়ে গেলে শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন স্তব্ধ হয়ে যাবে। জল ক্রমশ নিঃশেষিত হলে বিভিন্ন কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। উদ্ভিদ ও প্রাণীর ক্রমাগত বিনাশ বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করবে। যার ফলে পৃথিবীর জল হওয়া বিষাক্ত হবে। বিভিন্ন রোগ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় পৃথিবীর বাসযোগ্যতাকে নষ্ট করবে। এসব কারণেও প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচানো দরকার।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখা:

মানুষের মনকে প্রফুল্ল রাখার জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। তাই পৃথিবীতে বিভিন্ন গাছ, ফল, ফুল, পশুপাখি ইত্যাদির সমাবেশ আমাদের দৃষ্টিনন্দন করে। পৃথিবীকে তাই এই প্রাকৃতিক সম্পদের উপস্থিতি ছাড়া কল্পনা করা যায় না।

প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের উপায়গুলি:

প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করা আমাদের একান্ত প্রয়োজনীয় কর্তব্য। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করা যেতে পারে। যথা –

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির যথাযথ পালন:

গাছ প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ। গাছ ধ্বংস হলে পৃথিবীর অক্সিজেন ভান্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টিতে প্রকৃতি বিপর্যস্ত হবে। তাই সরকারি আইন প্রণয়ন করে, সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে বনসৃজন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা উচিত।

প্রাকৃতিক সম্পদের সীমিত ও যথাযথ ব্যবহার:

প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন – কয়লা, আকরিক লোহা, তামা প্রভৃতি থেকে শুরু করে গাছপালা প্রভৃতি অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ব্যবহারের ফলে শেষ হয়ে যায়। তাই নিয়ন্ত্রিত ও যথাযথ পদ্ধতিতে সম্পদের ব্যবহার করা উচিত। যেমন – বিদ্যুতের উৎস হিসেবে কয়লার বদলে সূর্যালোক, বায়ুপ্রবাহের ব্যবহার, বৃক্ষচ্ছেদনের দরকার হলে শুধুমাত্র পরিণত বৃক্ষচ্ছেদন প্রভৃতি।

আবর্জনার যথাযথ সঞ্চয় ও প্রক্রিয়াকরণ:

আবর্জনার সঞ্চয় ও প্রক্রিয়াকরণ এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে কয়লা, ইউরেনিয়াম ইত্যাদি খনিজের ব্যবহার কমানো যায়। এভাবেই প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার অটুট রাখা যায়।

সুপরিকল্পিত কৃষি পদ্ধতির প্রয়োগ:

ঝুম চাষের মতো অবৈজ্ঞানিক ও ক্ষতিকর কৃষি পদ্ধতির বদলে উন্নত কৃষিপদ্ধতির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। মাটির উর্বরা শক্তির ওপর বেশি চাপ যাতে না পড়ে, তা দেখতে হবে। জৈব সারের প্রয়োগ বেশি পরিমাণে করতে হবে। শস্যাবর্তন পদ্ধতির প্রয়োগ করতে হবে।

বৃষ্টির জলের সঞ্চয় ও ব্যবহার:

বৃষ্টির জলকে সঞ্চয় করে তার মাধ্যমে কৃষিকাজ, গৃহস্থলীর কাজকর্ম করলে জলসম্পদ বাঁচানো যায়। এর মাধ্যমে বাস্তুতান্ত্রিক তথা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষিত হয় এবং আরো অনেক সম্পদ সংরক্ষণ করা যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও আরো কয়েকটি পাশ্চাত্য দেশ এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে।

জনশিক্ষার ব্যবস্থা:

যদি জনসমাজকছ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য যথাযথ উৎসাহিত করা যায় তাহলে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের কোনো কর্মসূচি স্বার্থক হবে না। কারণ এর মাধ্যমে সর্বস্তরে সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা তৈরি হবে। এই প্রসঙ্গে চিপকো আন্দোলনের সার্থকতা উল্লেখযোগ্য।

পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার:

শক্তির উৎস হিসেবে যদি কয়লা, জল, ইউরেনিয়াম প্রভৃতির বদলে সূর্যের আলো, বায়ু প্রবাহ প্রভৃতি পুনর্নবী-করণযোগ্য শক্তির ব্যবহার করা যায়, তাহলে প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচবে এবং ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যাবে।

FAQ/বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী

ভারতের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?

রাজস্থানের রাওয়াতভাটা ভারতের বৃহত্তম পরমানবিক শক্তি কেন্দ্র।

ভারতের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনটি?

গুজরাটের চারাঙ্কা সোলার পার্ক ভারতের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

বিশ্বের বৃহত্তম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনটি?

চিনের গাঙ্গসু বিশ্বের বৃহত্তম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

ভারতের বৃহত্তম গ্যাস ভান্ডার কোনটি?

মুম্বাই হাই ভারতের বৃহত্তম গ্যাস ভান্ডার।

Leave a Comment

error: Content is protected !!