ভারতের নগরায়নের সমস্যা গুলি লেখ।

ভারতের নগরায়নের সমস্যাগুলি সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হলো। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রশ্নটির গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:

ভারতের মোট পৌর জনসংখ্যা 37.70 কোটি। এই পৌর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বসবাস করে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। এছাড়া গুজরাট মধ্যপ্রদেশ রাজস্থান ও কর্নাটকে বসবাস করে মোট পৌর জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। বাকি রাজ্যগুলির পৌর জনসংখ্যা অনেক কম। ভারতের দ্রুত বেড়ে চড়া নগরায়নের জন্য নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যা সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার অন্তরায় এই সমস্যাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

অপরিকল্পিত নগরায়ন:

ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার জন্য ভারতের বেশিরভাগ শহর নগর পরিকল্পনা ছাড়া গড়ে উঠেছে এবং এখনো উঠছে। ফলে কৃষিজমি, জলাভূমি, বনভূমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। নগর তাদের গ্রাস করে। অপরিকল্পিত নগরায়নের নগরে বস্তির বাড়বাড়ন্ত হয়। সরু রাস্তা, জলনিকাশি ব্যবস্থার সমস্যা, পানীয় জলের অভাব, ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস অপরিকল্পিত নগরায়নের প্রধান সমস্যা।

মানুষের শহরমুখী প্রবণতা:

শহর এবং গ্রামের উন্নয়নের পার্থক্যের জন্য ভারতে গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রবণতা বাড়ে। মূলত কাজের টানে ভারতের গ্রামবাসীরা শহরমুখী হয়েছে। এই অধিবাসীদের অস্থায়ী ও অনুন্নত বসবাস ভারতের নগর গুলিতে বস্তি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

বাসস্থানের অভাব:

মানুষের জীবিকার খোঁজে শহরে চলে এলে এখানে বাসস্থানের অভাব সৃষ্টি হয়। বাসস্থানের অভাবের জন্য রেল লাইনের পাশে, রাস্তার ধারে, খালপাড়ে বস্তিতে মানুষ আশ্রয় নেয়। মুম্বাই, কলকাতায় এই ধরনের বস্তি সমস্যা প্রবল।

পরিকাঠামোর অভাব:

শহর ও নগরে বাড়িগুলির বিন্যাস, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা, বিদ্যুতের যোগান এবং জলনিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে গড়ে ওঠে শহর বা নগরের পরিকাঠামো। ভারতের বেশিরভাগ শহরই পরিকাঠামগত সমস্যায় ভুগছে।

স্থাপনকারী:

ভারতে নগরায়ন প্রক্রিয়া অতি প্রাচীন। সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পা মহেঞ্জোদারো, আর্যদের দ্বারা মথুরা, হস্তিনাপুর ও অযোধ্যা, অনার্যদের দ্বারা কাঞ্চিপুরাম, মাদুরাই প্রভৃতি শহর গড়ে ওঠে। সুলতানি ও মুঘল যুগে দিল্লি, আগ্রা, পুনে প্রভৃতি শহর এবং ইংরেজদের দ্বারা কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই প্রভৃতি শহরে গড়ে ওঠার সময় প্রতিটি শহরের স্থাপত্য শিল্পের ছাপ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে দ্রুত এবং অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে ওঠায় শহর গুলি বসতি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

পরিবহন সমস্যা:

শহর নগরে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। অথচ অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য রাস্তা গুলি শুরু এর সাথে ফুটপাত দখল হওয়ার কারণে যানবাহনের গতি অত্যন্ত মন্থর বা যানজট একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

স্বাস্থ্য সমস্যা:

শহর ও নগরে শিল্পকারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যানবাহনের ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটায়। আবর্জনা, জলাভূমি, নর্দমা থেকে নানা পতঙ্গবাহিত রোগ, বস্তিতে জলবাহিত রোগ, পুষ্টি সমস্যা শহরের মানুষকে ভোগায়। সেই কারণে ভারতের নগর গুলি পৃথিবীর অন্যতম দূষিত নগরে পরিণত হয়েছে। পূর্ব ও উত্তর ভারতের শহরগুলি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পিছিয়ে আছে।

শিক্ষা সমস্যা:

শহরে স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি থাকায় শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত। তবে এক্ষেত্রে মুখ্য সমস্যা গুলি হল শিক্ষার্থীর তুলনায় উচ্চশিক্ষায় আসন সংখ্যা কম, শিক্ষার্থীর ও শিক্ষক অনুপাত সঠিক নয়, দরিদ্র বস্তিবাসীর পক্ষে শিক্ষার সব সুযোগ সুবিধা নেওয়া সম্ভব হয় না ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে অসাম্যতা সৃষ্টি হয়।

বিদ্যুৎ সমস্যা:

অপরিকল্পিত নগরায়নের বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি করে। বিদ্যুতের উৎপাদন ও বন্টন এর মধ্যে বৈষম্য তৈরি হয়। এতে শিক্ষা বাণিজ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়।

জলনিকাশি সমস্যা:

বেশিরভাগ শহরে জল নিকাশি ব্যবস্থা অনুন্নত। পূর্বে মূলত শহর সংলগ্ন নদী গুলিতেই শহরের আবর্জনা নিক্ষেপ করা হতো। এছাড়া জলনিকাশি ড্রেনগুলিতে প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করার জন্য নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। একটু বেশি বৃষ্টি হলে শহর জলপ্লাবিত হয়। ড্রেনে জমে থাকা নোংরা জলে নানবিধ কীটপতঙ্গ বাসা বাঁধে। যা থেকে জঞ্জালের সমস্যা সৃষ্টি হয়।

FAQ/বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী

ধারণযোগ্য উন্নয়ন কি?

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সেই প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর জন্য যে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে ধারণযোগ্য উন্নয়ন বলে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিশ্চল অবস্থা বলতে কী বোঝো?

যখন কোনো দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে স্থির অবস্থায় থাকে, তখন সেই পর্যায়কে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিশ্চল অবস্থা বলে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!