কফি চাষের উপযুক্ত ভৌগোলিক পরিবেশ এবং ভারতে কফির বন্টন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ভূমিকা:
কফি বিশ্বের ক্রান্তীয় দেশগুলির রপ্তানিযোগ্য কৃষিজ সম্পদ। স্থানীয় পানীয় হিসেবে ভারতে চায়ের পরে কফির স্থান। কফি উৎপাদনের জন্য নিম্নলিখিত ভৌগোলিক অবস্থান প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক পরিবেশ:
উষ্ণতা:
উষ্ণ ক্রান্তীয় জলবায়ু কফি চাষের অনুকূল। সাধারণত 20°-25°C উষ্ণতায় কফিগাছের চাষ করা হয়। উষ্ণ ও আর্দ্র ঋতুতে কফি গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বিপরীতভাবে শুষ্ক ও শীতল ঋতুতে কফি ফল পরিপক্ক হয়ে ওঠে।
বৃষ্টিপাত:
বার্ষিক 150-250 সেমি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে উৎপাদিত কফি স্বাদ ও বর্ণে অতুলনীয়।
সূর্যকিরণ:
কফি ফল পরিপক্ক ও সংগৃহীত হওয়ার সময় প্রচুর সূর্যকিরণ দরকার। উষ্ণ মন্ডলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রৌদ্রজ্জ্বল দিন সাধারণত আবহাওয়ার সাধারণ অঙ্গ, সে কারণেই ক্রান্তীয় মন্ডল কফি চাষে উপযুক্ত।
ভূপ্রকৃতি:
ঢালু উচ্চভূমি, বিশেষত পর্বতের পাদদেশে কফি চাষ ভালো হয়। দক্ষিণ ভারতের দক্ষিণ কর্ণাটক, পার্বত্য অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তর কেরলের পার্বত্য অঞ্চল ও তামিলনাড়ুর উত্তর অংশে প্রচুর কফি উৎপন্ন হয়।
মৃত্তিকা:
জল নিকাশি বন্দোবস্ত যুক্ত মৃদু অম্লধর্মী পটাশ ও হিউমাস সমৃদ্ধ মৃত্তিকা কফি চাষের পক্ষে আদর্শ। লাভা সৃষ্ট উর্বর মাটি এবং লোহিত মৃত্তিকা অঞ্চলে কফি উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়।
গাছপালা:
তুহিন, প্রবল বাতাস ও তীব্র সূর্যালোক কফি গাছের পক্ষে ক্ষতিকারক, ফলে ছায়া প্রদায়ী ও ঝটিকা রোধী বৃক্ষের আচ্ছাদনে কফি বাগিচাগুলি সুরক্ষিত হয়।
অর্থনৈতিক পরিবেশ:
শ্রমিক:
কফি ফল সংগ্রহ করা, ফল শুকানো, বীজ চূর্ণ করা, বাগিচা সৃজন ইত্যাদি কাজে যথেষ্ট দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিক দরকার। উন্নতশীল বিশ্বের ক্রান্তীয় বলয়ের জনবহুল দেশগুলি থেকে প্রচুর সুলভ শ্রমিক পাওয়া যায়।
মূলধন:
কফি বাগিচাগুলির সংরক্ষণ ও পরিচর্যা, শ্রমিকের মজুরি ও পরিকাঠামগত অন্যান্য বন্দোবস্ত এর জন্য প্রচুর মূলধন প্রয়োজন হয়।
পরিবহন:
কফি বাগিচাগুলির মধ্যে যাতায়াত, বাগিচা ও বাজারের মধ্যে সংযোগ এবং আঞ্চলিক বাজারের সাথে আন্তর্জাতিক বাজারের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা কফি উৎপাদন ও বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে পারে।
ভারতে কফির বন্টন লেখ।
ভারতে মূলত তিনটি রাজ্যে কফি উৎপাদন করা হয়। যথা –
1. কর্ণাটক:
কফি উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে। কর্ণাটকের কোদাগু, চিকমাগালুর, হাসান, মহীশূর প্রভৃতি অঞ্চলে কফি চাষ করা হয়। ভারতের মোট কফি উৎপাদনের প্রায় 72% এই রাজ্যে উৎপন্ন হয়।
2. কেরল:
কফি উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী রাজ্য। কেরলের কোঝিকোড়, কোল্লাম, কুইলন, কান্নুর প্রধান উৎপাদক অঞ্চল। ভারতের মোট কফি উৎপাদনের প্রায় 20% এই রাজ্য উৎপন্ন হয়।
3. তামিলনাড়ু:
কফি উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অধিকারী রাজ্য। তামিলনাড়ুর মাদুরাই, কোয়েম্বাটুর, সালেম জেলার নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চল প্রধান কফি উৎপাদক অঞ্চল। এই রাজ্যে ভারতের মোট কফি উৎপাদনের প্রায় 6% উৎপন্ন হয়।
4. অন্যান্য:
তেলেঙ্গানা সহ অন্ধ্রপ্রদেশের আরাকু উপত্যকায় কফি উৎপাদন করা হয়। ভারতের মোট উৎপাদনের 2% কফি এই রাজ্যগুলিতে উৎপন্ন হয়।
✓ ভারতের কফি গবেষণাগার কোথায় অবস্থিত?
ভারতের কফি গবেষণাগার কর্নাটকের চিকমাগালুরে অবস্থিত।
✓ ভারতে কোন ধরনের কফি চাষ বেশি হয়?
ভারতে রোবাস্টা কফির চাষ বেশি হয়।
✓ কফি উৎপাদনে বিশ্বে ভারতের স্থান কততম?
কফি উৎপাদনে বিশ্বে ভারতের স্থান ষষ্ঠ।
✓ ভারত কি ধরনের কফি রপ্তানি করে?
ভারত আরবীয় ও রোবাস্টা কফি রপ্তানি করে।
✓ ভারতের কোন বন্দর থেকে সবচেয়ে বেশি কফি রপ্তানি হয়?
ভারতের চেন্নাই বন্দর থেকে সবচেয়ে বেশি কফি রপ্তানি হয়।
✓ ভারত থেকে কোন কোন দেশে কফি রপ্তানি করা হয়?
ভারত থেকে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে কফি রপ্তানি করা হয়।