চা চাষের উপযুক্ত ভৌগোলিক পরিবেশ গুলি এই লেখাটিতে আলোচনা করা হলো। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ভূমিকা:
বিশ্বের ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বাগিচা কৃষির ফসল হিসেবে চা উৎপাদিত হয়। ভারতের প্রধান পানীয় ফসল চা। আর এই চা চাষে উপযুক্ত ভৌগোলিক পরিবেশ গুলি নিম্নরূপ –
প্রাকৃতিক পরিবেশ:
1. জলবায়ু:
প্রচুর বৃষ্টিপাত যুক্ত উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু যা চা চাষের উপযুক্ত এবং চায়ের স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ ইত্যাদি আবহাওয়ার উষ্ণতা ও আর্দ্রতার দ্বারা প্রভাবিত হয়।
2. উষ্ণতা:
চা চাষের জন্য ঘরে 20°-30°c ও গ্রীষ্মকালীন 27°c উষ্ণতার প্রয়োজন। চা গাছ কিছুটা বেশি উষ্ণতা বা অনেকটা ঠান্ডা আবহাওয়া সহ্য করতে পারলেও শীতকালীন তুষারপাত ও গরমকালে শিলাবৃষ্টি চা চাষের ভীষণ ক্ষতি করে।
3. বৃষ্টিপাত:
চা চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন, বছরে গড়ে 150 থেকে 250 সেমি।
4. মৃত্তিকা:
জলনিকাশি বন্দোবস্ত যুক্ত উর্বর, অম্লধর্মী, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ মিশ্রিত মৃত্তিকা চা চাষের উপযুক্ত। তবে সেই সঙ্গে পরিমাণ মত নাইট্রোজেন, জিংক ও পটাশিয়াম সার প্রয়োগে চা গাছ উপযুক্ত ভাবে বেড়ে ওঠে এবং গাছে যথেষ্ট পাতা বের হয়।
5. ভূ-প্রকৃতি:
ভূ-প্রকৃতি চা উৎপাদনে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এর জন্য জল নিকাশি ব্যবস্থা সম্পন্ন পাহাড়ি ঢালু জমিতে চা বাগিচা গুলি গড়ে উঠেছে।
6. উচ্চতা:
তুষারপাতের সম্ভাবনা মুক্ত খুব উঁচু পার্বত্য ঢালে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট চা উৎপন্ন হয়। ভারতে তরাই অঞ্চলে উচ্চতা 90 মিটার উচ্চতা থেকে শুরু করে দার্জিলিংয়ের 1980 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত চা বাগিচা রয়েছে।
অর্থনৈতিক পরিবেশ:
1. শ্রমিক:
চা বাগিচাগুলিতে দক্ষ পরিশ্রমী শ্রমিকের চাহিদা যথেষ্ট। যেহেতু চায়ের গুনাগুন পাতা সমূহের উপর নির্ভর করে, সেই জন্য ঠিকভাবে চা পাতা নেবে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে শিশু ও নারী শ্রমিকের আধিপত্য রয়েছে। তাছাড়া সার প্রয়োগ, আগাছা সাফায়, চা গাছকে নিয়মিত ছোটো করে দেওয়া প্রভৃতি নানা কাজে চা শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
2. পরিবহন:
উন্নত ও নির্ভরযোগ্য পরিবহন বন্দোবস্ত ছাড়া চা শিল্পের অগ্রগতি প্রায় অসম্ভব। চা বাগান গুলির মধ্যে আভ্যন্তরীণ যাতায়াত, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা চায়ের উৎপাদন ও বাণিজ্য বাড়াতে সাহায্য করে।
3. মূলধন:
বিশাল বাগিচা ক্রয়, বাগিচার রক্ষণাবেক্ষণ, শ্রমিকদের মজুরি, সার, কীটনাশক ও সেচের ব্যবস্থা করা, পণ্য বাজারজাত করার জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।
4. চাহিদা বা বাজার:
চা উৎপাদক অঞ্চল থেকে প্রধান ভোগ্যকেন্দ্রগুলি সাধারণত দূরে থাকে। দেশে এবং বিদেশে জনগণের মধ্যে চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি এবং পরিবর্ত পানীয়ের সংকোচন এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রচারের সাহায্যে চায়ের রপ্তানি বৃদ্ধি চায়ের উৎপাদনকে বাড়াতে পারে।
5. সাংগঠনিক ব্যবস্থা:
চা বাগিচার ভিতরে চা গুঁড়ো করার যান্ত্রিক ব্যবস্থা, চা পাতা শুকানো, চা-পাতা স্যাঁকা, গুণানুসারে বাছায়, প্যাকিং, বাক্সজাত করে বাজারে পাঠানো প্রভৃতি সব কাজ বাগিচাতে হবার মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
✓ চা রপ্তানিতে ভারত পৃথিবীতে কত তম স্থান অধিকার করে?
চা রপ্তানিতে ভারত তৃতীয় স্থান অধিকার করে।
✓ চা উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে কত তম স্থান অধিকার করে?
চা উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।
✓ চা গবেষণাগার কোথায় অবস্থিত?
অসমের জোড়হাটে চা গবেষণাগার অবস্থিত।