লৌহ আকরিকের ব্যবহার এবং ভারতে লৌহ আকরিকের বন্টন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
লৌহ আকরিকের ব্যবহার:
লৌহ আকরিক একটি সৃজনশীল ধাতু এবং আধুনিক শিল্প সভ্যতার রূপকার। আজকের যুগে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারিক প্রত্যেকটি জিনিসই প্রায় লৌহ নির্মিত। তাই আধুনিক যুগকে Iron and Steel Age বলে।
এর মুখ্য ব্যবহারগুলি হল –
1. পিগ আয়রন বা লোহাপিন্ড:
আকরিক লোহার সঙ্গে চুনাপাথর ও ডলোমাইট মিশিয়ে ধাতুচুল্লিতে গলানো হয়। এই গলিত তরল লোহাকে নির্দিষ্ট ছাঁচে ঢেলে লোহাপিন্ড তৈরি করা হয়।
2. শিল্পের কাঁচামাল রূপে:
লোহা ও ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল রূপে ইস্পাত কারখানায় আকরিক লোহা ব্যবহৃত হয়। এই শিল্পে প্রথমে পরিশুদ্ধ লোহাকে ছাঁচে ঢেলে ঢালাই লোহা বা পিগ আয়রন উৎপাদন করা হয়। তারপর পরিমাণ মতো ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, টাংস্টেন মিশিয়ে ইস্পাত উৎপাদন করা হয়।
3. লোহা ও ইস্পাতের ব্যবহার:
লোহা ও ইস্পাত এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। যেমন –
কৃষিজ যন্ত্রাদি প্রস্তুত:
কাস্তে, কোদাল, লাঙ্গল, ট্রাক্টর, হারভেস্টার প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়।
সমরাস্ত্র নির্মাণ:
ট্যাঙ্ক, কামান, বন্দুক, পিস্তল, গুলি ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়।
ভারী যন্ত্রপাতি নির্মাণে:
বয়লার, স্টিম, টারবাইন, রেডিয়েটর প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়।
ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে:
জাহাজ, রেল ইঞ্জিন, রেলগাড়ি, চাকা, ফিসপ্লেট, ট্যাংকার প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়।
হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে:
রিক্সা, সাইকেলের রিং, স্পোক ইত্যাদি এবং পাখার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরিতে।
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে:
বাস, লরি, মোটর গাড়ি, ট্রাক, অটোরিকশা প্রভৃতি নির্মাণে।
গৃহস্থালির উপকরণ তৈরিতে:
ছুরি, কাঁচি খুন্তি, করাই, সাঁড়াশি, বালতি, চিমটে প্রভৃতি।
নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদনে:
রড, বিম, গ্রিল প্রভৃতি।
নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত সামগ্রিক প্রস্তুতে:
করাত, হাতুড়ি, বাটালি ইত্যাদি।
এছাড়া রাসায়নিক শিল্পে, রং প্রস্তুতিতে, খনিজ সম্পদ উত্তোলনকারী যন্ত্রের প্রস্তুতিতে লোহা ব্যবহৃত হয়।
ভারতের লৌহ আকরিকের বন্টন:
ভারত লোহা উত্তোলনে পৃথিবীতে ভারতের স্থান চতুর্থ। ভরত লৌহ খনিজে বিশেষ সমৃদ্ধ। এদেশের আকরিক লোহা বেশ উন্নতমানের। ভারতের প্রায় সব লৌহ আকরিকের খনিগুলি ছত্রিশগড়, গোয়া, কর্ণাটক, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চলে অবস্থিত। ভারতের লৌহ আকরিকের বন্টন নীচে দেখানো হল –
রাজ্য | উত্তোলক অঞ্চল |
ছত্রিশগড় | দাল্লিরাজহারা (ভিলাই ইস্পাত কারখানার জন্য লৌহ-আকরিক এখান থেকে আসে), বাইলাডিলা। |
গোয়া | বিচোলিম, স্যানকুয়েলিম, সাতারি, মাপুসা, সাঙ্গুয়েম। মার্মাগাঁও বন্দর দিয়ে বিদেশে লৌহ-আকরিক রপ্তানি করা হয়। |
কর্ণাটক | কুদ্রেমুখ, বাবাবুদান পাহাড়, সান্দুর হসপেট। ভদ্রাবতী ইস্পাত কারখানায় এইসব খনিগুলি থেকে লৌহ আকরিক পাওয়া যায়। |
ঝাড়খন্ড | নোয়ামুন্ডি, গুয়া, বুদাবুরু ও পানশিরাবুরু লৌহ আকরিক জামশেদপুর, দুর্গাপুর, কুলটি, ইস্পাত কারখানায় ব্যবহার করে। |
ওড়িশা | ময়ূরভঞ্জ জেলা, গোরুমহিষানি, বাদাম পাহাড়, সুলাইপাত, বোঝাই এবং কেওনঝড় জেলার বাগিয়াবুরু। রৌরকেল্লা ও জামশেদপুর ইস্পাত কারখানায় এইসব অঞ্চলের লৌহ আকরিক আসে। |
অন্ধ্রপ্রদেশ | নেলোর, কুডাপ্পা, কুর্নূল, কিরণ ডোলের লৌহ আকরিক। বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এই বন্দর দিয়ে লৌহ আকরিক বিদেশে রপ্তানি করা হয়। |
মহারাষ্ট্র | সিন্ধুদুর্গ ও গড়চিরেলি, রত্নগিরিও চন্দ্রপুর থেকে লৌহ আকরিক রপ্তানি করা হয়। |
তামিলনাড়ু | সালেম, তিরুচিরাপল্লী লৌহ খনির জন্যই সালেম ইস্পাত কারখানা এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। |
মধ্যপ্রদেশ | জব্বলপুর, ছতরপুর, পশ্চিম নিবার, মান্দাসরের লৌহ আকরিক ভিলাই ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত হয়। |
রাজস্থান | জয়পুর, আলোয়ার, ভিলওয়ারা, উদয়পুর। |