মৃত্তিকার উর্বরতা সংরক্ষণের উপায়গুলি এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
মৃত্তিকার উর্বরতা সংরক্ষণের উপায়:
1. ভালোভাবে জমি কর্ষণ:
মৃত্তিকাকে উর্বর রাখতে হলে ভালোভাবে কর্ষণ করতে হয়, এর ফলে মৃত্তিকা আলগা হয়। আগাছাসহ বিভিন্ন শস্যাবশেষ মৃত্তিকায় চাপা পড়ে জৈব পদার্থের সৃষ্টি হয়, বায়ু চলাচল সহজ হয় এবং বিভিন্ন প্রকার ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব পরিবর্তন এর মাধ্যমে মৃত্তিকার উর্বরতা বজায় থাকে।
2. উপযুক্ত ফসল নির্বাচন:
মৃত্তিকার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে উপযুক্ত ফসল বা শস্য নির্বাচন করা উচিত। যে জমিতে যে ফসল সর্বাধিক পরিমাণে উৎপন্ন হয় সেই ফসলের চাষ করা উচিত। যেমন দোয়া মৃত্তিকায় গম চাষ উর্বর পল্লী মৃত্তিকায় ধান ও পাট চাষ পার্বত্য ঢালু অঞ্চলে ধাপ কেটে চা ও কফি চাষ।
3. শস্যাবর্তন কৃষি:
সারাবছর ধরে একই জমিতে একই ফসল বারবার চাষ করলে মৃত্তিকার পুষ্টিগুণ হ্রাস পায়। ফলে মৃত্তিকা অনুর্বর হয়ে পড়ে। তাই বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন ফসল চাষ করলে মৃত্তিকার উর্বরতা বজায় থাকে। যেমন – ধান ও গম চাষের পর সেই জমিতে ডাল ও শুঁটি চাষ করলে মাটির নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
4. জমিতে সবুজসারের ব্যবহার:
শুঁটি জাতীয় যেমন – সিম, কলাই, ছোলা, মটর প্রভৃতি এবং ও অশুঁটি জাতীয় উদ্ভিদ যেমন – গম, জোয়ার, বাজরা, ভুট্টা ইত্যাদি শস্য চাষ করে মৃত্তিকার সাথে মিশিয়ে দিয়ে মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
5. জৈবসারের ব্যবহার:
মৃত্তিকার উর্বরতা বজায় রাখার জন্য পাতা, ডাল, ফুল, ফল সহ উদ্ভিদের অন্যান্য দেহশেষ পচিয়ে বা প্রাণীর হাড়, গোবর ইত্যাদি মৃত্তিকায় জৈব সার হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে।
6. অজৈবসারের ব্যবহার:
জৈব সারে সব রকম পুষ্টি উপাদান থাকেনা বলে মৃত্তিকায় কিছু অজৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে মৃত্তিকায় উদ্ভিদের পুষ্টিমৌলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং মাটির পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
7. মৃত্তিকায় উপযুক্ত আর্দ্রতা সংরক্ষণ:
মৃত্তিকায় অতিরিক্ত জল থাকলে ধৌত প্রক্রিয়া বেশি সক্রিয় হয় ফলে খনিজ উপাদানগুলির নীচের স্তরে চলে যায়। ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পায় আবার মৃত্তিকার সঠিক আর্দ্রতা বজায় না থাকলে চাষাবাদ করা যায় না।
মৃত্তিকা ক্যাটেনা কাকে বলে?
ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা, বন্ধুরতা ও ঢাল প্রভৃতি বিষয় পরোক্ষভাবে মৃত্তিকা গঠনের নিয়ন্ত্রকগুলিকে প্রভাবিত করে ফলে একই প্রকার আদি শিলা ও জলবায়ু যুক্ত অঞ্চলে ভূপ্রকৃতির পার্থক্যের জন্য স্থানীয় ভূমিরূপ অনুসারে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন গভীরতায় বিভিন্ন প্রকার মাটির সৃষ্টি হয় তাকে মৃত্তিকা ক্যাটেনা বলে।
মৃত্তিকা বিজ্ঞানী মিলনে সর্বপ্রথম মৃত্তিকা ক্যাটেনা কথাটি ব্যবহার করেন।
Soil pH কী?
1909 খ্রিস্টাব্দে সুইডেনের রসায়নবিদ সোরেন স্যেন প্রথম মৃত্তিকার আনন্দ ও অম্লত্বের সূচক হিসাবে pH কথাটি ব্যবহার করেন।
pH কথাটি ল্যাটিন শব্দ ‘pondous’ থেকে এসেছে। যার অর্থ ‘হাইড্রোক্যাটায়নের ওজন’। যে স্কেল দ্বারা কোনো মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ অম্লত্ব, ক্ষারত্ব দ্বারা প্রকাশ করা হয় তাকে pH স্কেল বলে।
মৃত্তিকার pH সূচক এই স্কেলটির মান 0-14 পর্যন্ত হয়। pH এর মান 7 এর কম হলে অম্লধর্মী, 7 এর বেশি হলে ক্ষারধর্মী এবং pH এর মাপ 7 হলে প্রশম মৃত্তিকা।
FAQ/ বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী
কোলোয়েডস কী?
মৃত্তিকার কণাসমূহ বিভিন্ন আকারের হয়। সাধারণত যেসব কণার ব্যাস 1 মাইক্রন অপেক্ষা ছোটো আকারের হয়, তাকে মাটির কোলোয়েডস বলে। মৃত্তিকার কোলোয়েডস উদ্ভিদ পুষ্টি ও মৃত্তিকার রাসায়নিক ধর্মের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। প্রায় সবধরনের মাটিতেই ককোলোয়েড কণা থাকে।
হিউমাস কী?
সাধারণত হিউমিফিকেশন প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকাস্থিত অবিয়োজিত জৈব পদার্থ সমূহ(বৃক্ষের পাতা, মূল, ফুল প্রভৃতি) বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া ও ভিন্ন ভিন্ন জীবাণুর উপস্থিতিতে যে জটিল কালো রঙের খনিজ সমৃদ্ধ পদার্থের সৃষ্টি হয় তাকে হিউমাস বলে। হিউমাস সরাসরি মাটিতে ভৌত ও রাসায়নিক ও জৈবিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়। ফ্যাট প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত হিউমাস মৃত্তিকার সাথে যুক্ত হয়ে উর্বরতা বাড়ায়।